রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের বড়াইবাড়ী হাট সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একই চত্ত্বরে অবস্থিত উচ্চ বিদ্যালয়টিতে দেখা দিয়েছে নানামুখী সমস্যা।
বিদ্যালয় সুত্রে জানা যায়, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যালয়ের রাস্তা সংলগ্ন সীমানা প্রাচীর না থাকায় বিদ্যালয় দু'টিতে দেখা দিয়েছে নানামুখী সমস্যা। বিদ্যালয় ছুটির পর বিদ্যালয় মাঠে বসে জুয়ার আসর। রাতের আঁধারে বিদ্যালয় মাঠের আনাচে - কানাচে চলে মাদক সেবন। ফলে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পরে থাকতে দেখা যায় ফেনসিডিলের অসংখ্য খালি বোতল। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণটি বাজার ও বাজারগামী রাস্তার ধারে হওয়ায় প্রতিনিয়তই ছাত্রীদের ইভটিজিং এর মতো ঘটনার স্বীকার হতে হচ্ছে। আবার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যালয়ের পরিবেশ রক্ষা করা। বাজারের ময়লা আবর্জনার স্তুপ পরে থাকতে দেখা যায় বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে। তাই ময়লা - আবর্জনার দুর্গন্ধ, বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ফেলে যাওয়া আবর্জনায় বিদ্যালয়ের পরিবেশ এখন হুমকির মুখে।
শিক্ষকরা জানান, স্কুল ক্যাম্পাসের ভেতর বাদেও দুই পাশে বিরোধপূর্ণ জমিসহ নানা সমস্যার কারণে উপজেলা সদর বাজারের প্রতিদিনের কয়েক টন ময়লা-আবর্জনা স্কুলের আশপাশে ফেলা হচ্ছে। দিনে স্কুল থেকে পাহারার ব্যবস্থা করলেও রাতে ময়লা ফেলা হয়। ক্যাম্পাসের ভেতর এবং বাইরের এসব আবর্জনার দুর্গন্ধে বিদ্যালয়ের স্বভাবিক সুস্থ পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বিদ্যালয়টি খোলা হলে এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ পাঠদান ব্যাহত হবে।
এ বিষয়ে অবিভাবক করিম বকস বলেন, আমি আমার সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে খুব চিন্তায় থাকি। রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন যাতায়াত করে যে কোন মূহুর্তে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। অপর একজন অভিভাবক মো : সোহাইবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, আমি চার দিন আগে সকাল ৯. ৩০ মিনিটেও স্কুলের সব কিছুই বন্ধ দেখে বিষয়টি সভাপতিকে ফোনে অবগত করেছি। পাশাপাশি স্কুলের লেখাপড়া, পরিবেশ এবং সার্বিক বিষয়ে অবনতি লক্ষনীয়।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো: লাবলু মিয়া বলেন, বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্টের প্রধান কারণ পশ্চিম পার্শ্বের রাস্তা সংলগ্ন প্রাচীর না থাকা। সেজন্যই বিদ্যালয়ের মাঠে বকাটেদের আড্ডা, জুয়ার আসর এবং রাতের আঁধারে মাদক সেবিদের উৎপাত দেখা যায়। সেবনের পর পরিত্যক্ত বোতলসহ বাজারের ময়লা আবর্জনার স্তুপ জমে থাকে। ফলে ছাত্র -ছাত্রীদের খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যেই বকাটেদের ইভটিজিং'র স্বীকার হচ্ছে ছাত্রীরা।
এ বিষয়ে বড়াইবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আলমগীর জামানের সাথে বিদ্যালয়ের সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান সমস্যা হলো রাস্তা সংলগ্ন সীমানা প্রাচীর না থাকায় বিদ্যালয়ের পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন।
গঙ্গাচড়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাছুমুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ তামান্না বলেন,বিদ্যালয়ের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলা দুঃখজনক। বিষয়টি জানার পর তিনি হাটের ইজারাদারদের ডেকে কথা বলেছেন। তাঁরা যাতে ওই স্থানে আর কোনো বর্জ্য ফেলতে না পারে তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বড়াইবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৮৯৮ সাল হতে অদ্যবধি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে । তিস্তার কোল ঘেঁষে এই বিদ্যালয়টি দীর্ঘ ১২৬ বছর যাবৎ বিশাল এলাকা জুড়ে তিস্তাপাড়ের মানুষের প্রাথমিক পার্যায়ের শিক্ষা লাভের একমাত্র নির্ভর যোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে অবদান রেখে আসছে। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তার কারণেই একই ক্যাম্পাসে ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বড়াইবাড়ী বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়। তখন থেকে যথাযথ সুনামের সাথে বড়াইবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালতি হয়ে আসছে।