বর্তমান সময়ে কিশোর গ্যাং সমাজের জন্য মারাত্মক এক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে । কিশোর গ্যাংয়ের কারণে সমাজ তথা দেশের শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট হচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে, এই গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। উঠতি বয়সের ১৫ থেকে ১৭ বছরের কিশোররা পরিণত হচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ে।
পরিসংখ্যান বলছে এসব কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধমূলক কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সাধারণ মানুষকে নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করা, ইভটিজিং বিশেষ করে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের উদ্দেশ্যে বাজে মন্তব্য করা, একে অন্যের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হওয়া, ভয়-ভীতি, হুমকি দেওয়া, মারামারি, দাঙ্গা-হাঙ্গামায় জড়িত হওয়া ইত্যাদি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এক বা একাধিক পক্ষের হয়ে বিবাদে জড়িয়ে হতাহতের ঘটনাও ঘটাচ্ছে এসব উঠতি বয়সীরা৷ এক শ্রেণীর সন্ত্রাসীরা এসব কিশোরদের ব্যবহার করে সংঘটিত করছে নানা অপরাধ মূলক কর্মকান্ড৷ এক সময় এসব অপরাধের পাশাপাশি মাদকের ভয়াল নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে কিশোররা। তখন মাদকের অর্থের জোগান দিয়ে নিয়মিত ছিনতাই, চুরি, চাঁদাবাজি থেকে ডাকাতির মতন বড় বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এসব কিশোররা। প্রতিনিয়ত আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে আটকের পাশাপাশি কারাগার গুলোতে বাড়ছে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা৷ বিশেষজ্ঞদের মতে শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ করে কিশোর গ্যাংকে নির্মূল কোন ভাবেই সম্ভব নয়।
এবার কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ, অপরাধ দমন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থানীয় কিশোর ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে ব্যতিক্রমি সভার আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের চান্দগাঁও থানা কমিউনিটি ও বিট পুলিশিং।
শনিবার (২০ এপ্রিল) বিকেল ৫টায় চান্দগাঁও থানাধীন কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চান্দগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ জাহিদুল কবিরের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী পুলিশ কমিশনার (পাঁচলাইশ জোন) আরিফ হোসেন।
কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে ব্যতিক্রমী আয়োজন
মতবিনিময় সভায় কিশোরদের অপরাধ দমনে করণীয় সম্পর্কে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়। সেগুলো হচ্ছে - সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা, পারিবারিকভাবে ভাল-মন্দ বিষয়ক শিক্ষা দেওয়া, কিশোরদের নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা, পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধূলার ব্যাবস্থা করা, কিশোরদের তার মা-বাবার উচিত পর্যাপ্ত সময় দেওয়া, তাদের সহিত পারিবারিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করা, তারা কার সাথে মেলামেশা করে তার খোঁজ খবর নেওয়া, তারা কখন বাসায় ফিরছে, কোথায় কার সাথে ঘোরাফেরা করছে তার খোঁজ খবর নেওয়া। এছাড়া তাদের বিখ্যাত লেখকদের গল্পের বই পড়ায় আগ্রহী করা।
সভায় মূল আলোচকরা বলেন, কিশোররা যেন তাদের পরিবারের ব্যাধিতে পরিণত না হয়ে ঘরের আলো হয়ে ওঠতে পারে তার ব্যাবস্থা করতে হবে। কিশোররা যেন সমাজের বিষ ফোঁড়া না হয়ে আগামীর ভবিষ্যৎ হয়ে উঠতে পারে সেই উদ্যোগ নিয়ে হবে। তাদের অবহেলা না করে তাদের প্রতি স্নেহ, ভালোবাসা, যত্ন বৃদ্ধি করা।
এ ছাড়াও কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমের অংশ হিসাবে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের পুলিশের কাজে সহযোগিতা, অপরাধবিরোধী সচেতনতা তৈরি, বাল্যবিবাহ রোধ, ইভটিজিং প্রতিরোধ, মাদক নির্মূল, জঙ্গিবাদ দমন, সন্ত্রাস দমন, মাদকের কুফল, নারী ও শিশু নির্যাতন, যৌতুকনিরোধ, বাল্য বিবাহ, চাঁদাবাজী, ছিনতাই, মোবাইল ফোনের অপব্যবহার, সামাজিক মূল্যবোধ বাড়ানো ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
মতবিনিময় সভায় মোহরা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী নুরুল আমিন মামুন, চান্দগাঁও থানা কমিউনিটি পুলিশিং সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরী,মোহরা ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি এস এম আনোয়ার মীর্জা,কমিউনিটি পুলিশিং বীট নং-৪০ এর সভাপতি আলমগীর, কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি উপদেষ্টা রফিক কোম্পানী সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।