শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫ ২৭ আষাঢ় ১৪৩২
শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫
তীব্র গরমে চরম বিপাকে রূপগঞ্জের শ্রমজীবী মানুষ
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ৩:৫৬ PM
অত্যধিক গরমে জনজীবন যখন বিপর্যস্ত,ঠিক তখনও জীবন–জীবিকার তাগিদে অসহনীয় মাত্রার তাপে পুড়ছেন শ্রমজীবী মানুষ। প্রচণ্ড উত্তাপে সারাদেশে হিট–এলার্ট জারি করা হলেও পরিবর্তন হয়নি রিক্সাওয়ালার প্রতিদিনের বিচরণ ক্ষেত্র।

তাপমাত্রা প্রায় সময়ই ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে ফেলছে, কিন্তু কৃষক–দিনমজুররা কাজ করছেন সেই আগের মতোই খোলা আকাশের নিচে। হিট–স্ট্রোকের মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনাকে উপেক্ষা করে প্রতিদিন কাজে নামছেন শ্রমিকরা। উদ্ভূত এই পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে স্বাস্থ্যবিদরা স্যালাইন ও ডাবের পানি খেতে পরামর্শ দেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, পানি শূন্যতা মেটাতে অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষই শুধু মাত্র খাবার পানি ছাড়া আর কিছু সংগ্রহ করতে পারেন না। কেননা তাপমাত্রা বাড়লেও বাড়েনি নিত্যদিনের মজুরি।

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এই সময়ে নিজের সুস্থতার পিছনে কিছু ব্যয় করতে গেলেই তা অন্যদিকে সংকট সৃষ্টি করবে। সব মিলিয়ে খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে দিন কাটছে এসব মেহনতি মানুষের। তবে এর মাঝেও খুবই স্বল্প পরিসরে কিছুটা আশার আলো দেখা যায়। ইদানীং অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রিক্সাওয়ালা ও শ্রমিকদের স্যালাইন ও খাবার পানি দিয়ে সাহায্য করছে।

রূপগঞ্জ ভুলতার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম। পেশায় একজন রিকশাচালক। জীবিকার তাগিদে সকালবেলা রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন। ততক্ষণে বাড়তে শুরু করেছে রোদের তীব্রতা। ভুলতা থেকে বরপা এরপর সেখান থেকে আবারও যাত্রী নিয়ে গোলাকান্দাল । তীব্র রোদে আর এগোতে পারছেন না, তাই ক্লান্তি ভরা শরীর নিয়ে রিকশায় বসে ঝিমাচ্ছেন।

গতকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রূপসীর স্ট্যান্ডের মোড়ে কথা হয় শহিদুলের সঙ্গে। গরমে কেমন আছেন জানতে চাইলে বলেন, গরমে মাথা ঘুরাচ্ছে। একটা ভাড়া টানলেই শরীর একদম ক্লান্ত হয়ে যায়। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে রিকশা চালাই। বড় কোনো ভাড়া টানতে পারি না। ২০ থেকে ৬০ টাকার ভাড়া টানি। গরম না থাকলে রিকশায় তিনজন নিয়েও চলতাম এখন দুইজন যাত্রী নিয়ে চালাতে কষ্ট। বেশিরভাগ সময় একজন নিয়ে চালাই। আগে দিনে ১২ থেকে ১৪ টা ভাড়া টানতাম এখন ৭ থেকে ৮টার বেশি পারি না। এক ঘণ্টা রিকশা চালালে আবার এক ঘণ্টা রেস্ট নিতে হয়।

এই রিকশাচালক আরও বলেন, গত এক সপ্তাহ থেকে দূরের কোনো ভাড়া কিংবা একজনের বেশি যাত্রী টানতে পারছেন না তিনি। গরমে বেশি ভাড়া টানতে না পারায় আগের চেয়ে আয় রোজগার কমেছে, অন্যদিকে খরচও বেড়েছে নিত্যদিনের।

তারাব বিশ্বরোড মোড়ে কথা হয় ষাটোর্ধ্ব রূপ মিয়ার সঙ্গে তিনি বলেন, সকালবেলা রোদ ওঠার আগে ভাড়া টানা যায়। বেলা গড়িয়ে রোদ বাড়ার পর আর পারি না। খুব কষ্ট হয়। যতক্ষণ চালাই, মাথায় গামছা বেঁধে চালাই। এদিকে, গরমে মানুষও বের হচ্ছে কম। যারাই আছে, ভাড়া আছে ভালো। কিন্ত গরমে শরীর আর পা চলে না।

চিকিৎসক বিশেষজ্ঞরা জানান, শ্রমজীবীরা প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মধ্যে বাইরে কাজ করেন বলে তাদের ঝুঁকি বেশি। গরমে একটানা কাজ করতে গিয়ে প্রচণ্ড ঘাম হয়। এ সময়ে দেহে লালচে ফোসকা পড়া, বমি ভাব, অবসাদ, মাথা ঘোরা, মাংসপেশির খিঁচুনি (হিটক্র্যাম্পস) ও হিটস্ট্রোক হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে হিটস্ট্রোকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। পানিশূন্যতা থেকে কিডনির ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে বলেন, কাজ করার সময় শরীর যেন পানিশূন্য হয়ে না পড়ে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। প্রচুর পানি পান করতে হবে। তবে ঠান্ডা পানি ঢকঢক করে দ্রুত পান করা যাবে না। শ্রমজীবী মানুষদের মধ্যে রাস্তাঘাটের শরবত পান করতে দেখা যায়। এ সময়ে দূষিত পানি ও খাবার থেকে কলেরা, ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই বিশুদ্ধ পানি ও খাবার খেতে হবে। কাজের সময় সাদা ও হালকা রঙের ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। শ্রমজীবী মানুষের বাইরে এ সময়ে শিশু ও বয়স্কদের প্রতিও যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

 
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত