বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫ ২৬ আষাঢ় ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
২০ শয্যার সরকারি হাসপাতালে মাদকের আখড়া
ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: শনিবার, ২ মার্চ, ২০২৪, ৪:৩১ PM
ঢাকার ধামরাই উপজেলায় রোয়াইল ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর এলাকায় অর্থ বাজেট ও পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২০ শয্যার সরকারি হাসপাতাল আজ ধ্বংসের মুখে। ভেঙে পড়েছে পলেস্তার, দরজা, জানালা। নির্মাণের ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও চিকিৎসা সেবার সুফল পাননি স্থানীয় সাধারণ জনগণ।

২০০৬ সালের ৩ নভেম্বর ৪ একর জায়গার উপর হাসপাতালটি নির্মিত হয়েছে হাসপাতালটি। বর্তমানে চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। হাসপাতালে নেই কোনো ডাক্তার, নার্স। নেই কোনো চিকিৎসা পত্র। রোগী আসে না, আসলেও কোনো চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সুযোগ নেই।

হাসপাতালে কোনো  ঔষধ পত্র নেই। নিরাপত্তার জন্য নেই কোনো নিরাপত্তা প্রহরী। সব সময় হাসপাতালটির প্রধান ফটকের ছোট গেট খোলা থাকে। হাসপাতালের সামনেই স্থানীয়দের গোবর শুকাতে দেখা যায়। মাঠে দেখা যায় গবাদি পশু চারণ করতে। ডাক্তারদের আবাসিক ভবনের সামনে রয়েছে ময়লা আবর্জনা ও গোবর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল বা সন্ধ্যা হলেই মাদকসেবিদের আড্ডা চলে।

স্থানীয় সাধারণ জনগণ দেখার পরও কিছু বলতে সাহস পায় না। এমন দৃশ্য দেখা যায়, উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল রোয়াইল ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর এলাকায়। ২০০৬ সালের ৩ নভেম্বর ঔই ২০ শয্যার হাসপাতালটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের  নির্মাণ ও রক্ষাণাবেক্ষণের ব্যবস্থাপনা ইউনিটের প্রধান প্রকৌশলী কর্নের মো: ফজলুর রশিদ মৃধা (পিএসসি) তিনি ঔই গ্রামেরই সন্তান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালটি বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। নিরাপত্তা প্রহরী না থাকায় যে কেউ অনায়াসে প্রবেশ করছে হাসপাতালের ভিতর। মূল হাসপাতালটির দরজার গ্লাস ভেঙে পড়ছে, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও বাল্ব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার নার্সদের থাকার আবাসিক ভবনগুলোর ভিতরে চলে মাদকের আড্ডা। একটি আবাসিক ভবনের ভিতর দেখা যায়, বিড়ি সিগারেটের প্যাকেট, মদের বোতল ও ইনজেকশনের সিরিজ। ভবনের ভিতর থেকে বেশির ভাগ বৈদ্যুতিক পাখা, তার ও বাল্ব নিয়ে গেছে দুষ্কৃতকারীরা।

স্থানীয়রা জানান, হাসপাতালটি চালু না হলে যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয় তাহলেও অনেক উপকার হবে। তাছাড়া এই হাসপাতাল ধ্বংস হয়ে যাবে, পরিনত হবে মাদকসেবিদের আড্ডা খানা। আমরা মানুষের সেবার জন্য জায়গা দিয়েছি। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত কোন সেবা ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও পাইনি। 

৭ম শ্রেনির শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ বলেন, হাসপাতালের কোনো  কার্যক্রম নেই। একজন লোক  সপ্তাহে দুই একদিন আসেন। কিছু সময় থেকে চলে যায়। চিকিৎসা নিতে গেলে বলেন, আপনারা এখানে আসেন কেন। কোনো ঔষধ পত্র নাই। যারা আসেন তারা বলেন, আমরা শুধু উপস্থিতি দেখানোর জন্য আসি, তাছাড়া চাকরি চলে যাবে।

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম ইফাত বলেন, হাসপাতাল থাকার দরকারটা কি যদি চিকিৎসাই দিতে না পারে। তার চলে স্কুল করে দিলে আমরা পড়াশোনা করতে পারবো। গাড়ি ভাড়া দিয়ে আর দূরে যেতে হবে। তাছাড়া গার্মেন্টস করে দিলে মানুষ চাকরি করতে পারবে।৭০ বছরের বৃদ্ধ নুরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল নির্মাণের পর আজও চালু হয় নি। এভাবেই পরে আছে। ডাক্তার আসে কোন চিকিৎসা দেয় না। এসেই চলে যায়।শহিদুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালটি ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজও চালু হয় নি। হাসপাতালটি চালু হলে সাধারণ জনগণকে আর সাভার, মানিকগঞ্জ গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। আর চালু না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা হোক। তারপরও যেন কোটি টাকার হাসপাতালটি ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যায়।

আরিফুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালটি আজও চালু হয় নি। ডাক্তার হঠাৎ করে আসে। কোনো  ঔষধ পত্র নাই। বিকেলের দিকে বহিরাগত লোকজন আসে রাত পর্যন্ত থাকে। মাদকের আড্ডা বসে। স্থানীয়রা কেউ কোন কথা বলতে সাহস পায় না সব জানার পরও। ডাক্তারদের থাকার যে ভবনগুলো রয়েছে সেখানে শুধু মাদকের চিহ্ন রয়েছে। দ্রুত হাসপাতালটি চালু করা দরকার। হাসপাতাল নিয়ে প্রশাসনের সু দৃষ্টি কামনা করছি। তাছাড়া ছোট বাচ্চা ও স্থানীয়রা এক সময় মাদকের সাথে জড়িত হয়ে পড়বে। মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট আলমগীর হোসেন বলেন,  এই হাসপাতাল ও ঔষধ পত্রের  জন্য কোন বরাদ্দ নেই। নেই কোনো  নিরাপত্তা প্রহরী। 

চারপাশের দেয়ারের নিচে দিয়ে লোকজন ভিতরে চলে আসে। তদারকির লোকজন না থাকায় মাদকসেবিদের আড্ডার জায়গা হয়ে উঠেছে। যদি হাসপাতালটি চালু করা যেত একদিকে কোটি টাকার ভবন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেত অপরদিকে স্থানীয় গরীব অসহায় লোকজনের জন্য চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যেত। কৃষ্ণ নগর গ্রামের লোকজন সঠিক চিকিৎসা পেত। অর্থ বাজেট না থাকায় কোন ঔষধ দিতে পারি না। তবে আলমগীর হোসেন ডাক্তার আসার কথা স্বীকার করলেও চিকিৎসা দিতে পারেন না তাও স্বীকার করেন। মাদকের বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন। গেইটে পাহারাদার না থাকায় লোকজন অবাধে বিচরণ করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: নূর রিফফাত আরা বলেন, অন্তবিভাগের জন্য বরাদ্দ না থাকায় অন্ত: বিভাগ বন্ধ রয়েছে। কিন্তু আউটডোর চালু আছে।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত