ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের হাথরাস জেলায় ধর্মীয় সভায় পদদলিত হয়ে এখন পর্যন্ত ১২১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই নারী, আর কয়েকটি শিশু রয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেফতার হতে পারেন কথিত ধর্মগুরু নারায়ণ সরকার হরি ওরফে ‘ভোলে বাবা’।
গতকাল মঙ্গলবার (২ জুলাই) ওই অনুষ্ঠানে ভক্তদের উদ্দেশে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ‘ভোলে বাবা’ নামে কথিত এক ধর্মগুরু। ওই সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে প্রশ্ন ওঠেছে কে এ ধর্মগুরু, যার অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রাণ গেল শতাধিক মানুষের!
এ ‘ভোলে বাবা’ নারায়ণ সরকার হরি নামেও পরিচিত। যদিও এটি তার আসল নাম নয়। তার আসল নাম সুরাজ পাল। উত্তরপ্রদেশের ইতাহ বিভাগের বাহাদুর নগরী গ্রামে তার জন্ম। সেখানেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা নেন। তার দাবি, কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে গোয়েন্দা বিভাগে কাজ শুরু করেন তিনি।
এ বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, ‘ভোলে বাবা’ প্রায়ই তার ভক্তদের কাছে দাবি করেন তিনি গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেছেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার সময়ই আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকে পড়ায় ১৯৯০ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন।
ভক্তদের কাছে কথিত এ ধর্মগুরু বলেন, ভক্তরা তাকে যে অর্থ দান করেন, তার কিছুই নিজের জন্য না রেখে বরং সবটাই তার অনুসারীদের পেছনে ব্যয় করেন তিনি। শুধু তাই নয়, নিজেকে ভগবান হরির শিষ্য বলে অভিহিত করেন তিনি। পাশাপাশি দাবি করেন, উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলে তার অনেক ভক্ত আছে।
স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, খুব ছোট একটি জায়গায় এ ‘সৎসঙ্গর আয়োজন করা হয়েছিল। অল্প জায়গায় বহু মানুষের ভিড়ে ‘দমবন্ধকর’ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অনুষ্ঠানস্থলে নিঃশ্বাস নিতে না পারায় 'সৎসঙ্গে' উপস্থিত লোকজনের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল। এরপর লোকজন সেখান থেকে সরে যেতে তাড়াহুড়ো শুরু করলে পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
কে এই ভোলে বাবা?
ভোলে বাবা একজন ধর্মপ্রচারক। তিনি উত্তর প্রদেশের হাথরাসে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। সেখানেই মঙ্গলবার পদদলিত হয়ে শতাতিক ব্যক্তির প্রাণ যায়। আলোচিত এ ভোলে বাবা আগে রাজ্য পুলিশে চাকরি করতেন। পুলিশে তিনি প্রায় ১৮ বছর চাকরি করেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, উত্তর প্রদেশ পুলিশের স্থানীয় গোয়েন্দা ইউনিটে কাজ করতেন ভোলে বাবা। চাকরি ছাড়ার পর তিনি লোকজনকে উপদেশ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের জন্য সৎসঙ্গ আয়োজন শুরু করেন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাবার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। নিজেকে নারায়ণ সরকার হরি বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন তিনি। তার ভক্তের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
এই ভোলে বাবা পাতিয়ালির বিশ্ব হরি বাবা নামে বেশি পরিচিত। জনসমক্ষে তিনি আসেন সাদা কাপড়ে। উপদেশ অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে থাকেন স্ত্রী। বাবার ভক্তদের বেশিরভাগই আসেন আগ্রা ও আলিগড় জেলা থেকে। তার ভক্তদের বেশিরভাগই নিম্নআয়ের।
বাবা কোনো গুরুর অনুসারী নন বলে বিশ্বাস করা হয়। তার দাবি, যেসব উপদেশ তিনি দেন, সেগুলো সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে আসা। ফেসবুকে বাবার অনুসারীর সংখ্যা তিন লাখের বেশি। তার সৎসঙ্গ অনুষ্ঠানে অনেক সংসদ সদস্য ও বিধানসভার সদস্য যোগ দেন বলে মনে করা হয়। এ অনুষ্ঠান মঙ্গলবার আয়োজন করা হয়ে থাকে।