মঙ্গলবার ১১ নভেম্বর ২০২৫ ২৭ কার্তিক ১৪৩২
মঙ্গলবার ১১ নভেম্বর ২০২৫
আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ডে বদলে যাচ্ছে চরবাসীর আর্থ-সামাজিক জীবন
লাবিবা রওনক রচনা, কুড়িগ্রাম
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫, ৪:৪১ PM
১৬টি নদ-নদী বেষ্টিত কুড়িগ্রাম জেলায় রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক চর। এইসব চরে বসবাস করে কৃষি কাজের সাথে যুক্ত রয়েছে অসংখ্য পরিবার। প্রতিবছরই বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে এইসব পরিবার। বিনষ্ট হয় চরের ফসল এবং পরিবারগুলো পড়ে যায় চরম সংকটে। হয়ে যায় দিশেহারা।

সৃষ্ট এ পরিস্থিতিতে দুর্দশাগ্রস্ত ৮৪০টি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার এবং একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ, বাংলাদেশ। দুর্যোগকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার পাশাপাশি পারিবারিক ভাবে আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে এগিয়ে এসেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান টি। এ সহযোগিতায় এসব পরিবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। সেই সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে তাদের জীবনমান।

সংস্থাটি এ বছর জেলার চিলমারী, রৌমারী ও সদর উপজেলায় ২৮টি চরের ৮৪০টি দরিদ্র পরিবারকে বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়ে উন্নয়নমুখী হতে সহযোগিতা করছে। প্রশিক্ষণসহ পরিবারগুলোকে শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে শাকসব্জির বীজ দেওয়া ছাড়াও তাদের মাঝে ভেড়া বিতরন করা হয়েছে। এছাড়াও ফ্রেন্ডশিপ বিভিন্ন দুর্যোগে পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। বন্যাকালীন সময়েও যেন সবজি উৎপাদন অব্যাহত থাকে সেজন্য কমিউনিটি ভিত্তিক সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে সংস্থাটি। বস্তায় আদা চাষে উৎসাহিত করায় গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে ইদানীং বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে। সবজি উৎপাদনে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদন এবং তা ব্যবহারে সহায়তা প্রদান করছে। পরিবারগুলোর বন্ধন অটুট রাখার জন্য পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ ও আইনগত বিষয় নিয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা অব্যাহত।

গতকাল কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় অবস্থিত চর যাত্রাপুর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এই গ্রামের বন্যা কবলিত এবং নদীভাঙ্গনের শিকার ৩০টি পরিবারকে পারিবারিক আয়বৃদ্ধিমুলক কর্মকান্ড ছাড়াও সামাজিক উন্নয়নমুলক কাজে যুক্ত করা হয়েছে।

এই গ্রামের বাসিন্দা আকলিমা জানান, ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড প্রকল্প থেকে আমাকে ৪ হাজার ১০০ টাকা দিয়ে একটি ভেড়া দিয়েছে এবং সেটি থেকে ৪টি বাচ্চা হয়েছে। এখন আমার ৬টি ভেড়া। যার বাজার মূল্য ৪২ হাজার টাকা। একই গ্রামের তাজমা বেগম বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে শাক-সবজি উৎপাদনের প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর আমার বসতবাড়ীতে সবজি উৎপাদন করে এ বছর ২০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছি। যা আমার সাংসারিক ব্যয়ভার বহন করে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে পেরেছি। স্বামীর একার আয়ের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে না।

চর যাত্রাপুর গ্রামের রাহেনা বলেন, প্রকল্প থেকে কেঁচো সার তৈরীর প্রশিক্ষণ পেয়ে বসতবাড়ীতে কেঁচো সার উৎপাদন করছি এবং প্রতিমাসে ১ হাজার ২ শত টাকার কেঁচো সার বিক্রি করছি। খাদিজা বেগমের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি ফ্রেন্ডশিপের সহায়তায় ১০০টি বস্তায় আদার চাষ করেছেন এবং প্রতি বস্তায় ১ থেকে দেড় কেজি আধা পাবেন বলে তিনি আশাবাদী। এ গ্রামের আরো অনেকেই বস্তায় আদা চাষ, সবজি ও ভার্মিকম্পোষ্ট উৎপাদন এবং ভেড়া পালন করে পরিবারের আয়বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।

এই গ্রামের লেবু মিয়া জানান, আমাদেরকে সুশাসন সম্পর্কে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে। আমরা পারিবারিক নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, তালাকপ্রাপ্ত, বহুবিবাহ, পারিবারিক দ্বন্দ, সংবিধান, সংসদ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এখন কোনো আইনি পরামর্শ প্রযোজন হলে আমরা ফ্রেন্ডশিপের সহায়তা গ্রহণ করি। তারা আমাদেরকে বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ  অব্যাহত রেখেছেন।

ঐ গ্রামের রবিউল ইসলাম, আম্বিয়া ও সুমি বেগম বলেন, আগে হাট থেকে রাসায়নিক সার কিনে আনতাম, এখন আমরা জৈব সার তৈরি করে ব্যবহার করি, ফেরোমন ফাঁদ দিয়ে পোকা মারছি, সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতে বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ করছি।

কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে,‘ফ্রেন্ডশিপ’ এর ট্রান্সজিশনাল ফান্ড (এএসডি) প্রকল্পের রিজিওনাল ম্যানেজার কৃষিবিদ মোঃ আশরাফুল ইসলাম মল্লিক জানান, ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গ এর সহায়তায় সদস্যদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশাসন এবং স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী এবং রৌমারী উপজেলার মোট ২৮টি চরে এ বছর ৮৪০ জন সদস্যকে উক্ত প্রকল্পের আওতায়  সহায়তা প্রদান করেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, উক্ত প্রকল্পের পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক উপকারভোগীদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ কারিগরী সহায়তা দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মো. হাবিবুর রহমান জানান, কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী এবং রৌমারী উপজেলায় ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড প্রকল্পের মাধ্যমে এ বছর ৮৪০টি পরিবারকে ভেড়া প্রদান করেছে এবং প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ফলে পরিবার গুলো ভেড়া পালনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে তাদের অধিক আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেকটি ভেড়াকে টিকা এবং কৃমিনাশক বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। চর এলাকা ভেড়া পালনের জন্য উপযুক্ত তাই ভেড়া পালনের মাধ্যমে চরাঞ্চলের মানুষকে স্বাবলম্বী করে তোলা সম্ভব বলে তিনি উল্লেখ করেন।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত