পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতার কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মোবাইল ব্যাংকিং থেকে ১০ হাজার একশ টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা। তবে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন, চাঁদাবাজি নয় বরং ছোট ভাইয়ের পাওনা টাকা আদায় করে দিয়েছেন তারা।
অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা হলেন জাকির হোসেন। তিনি সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটিতে না থাকলেও আসন্ন কমিটিতে তিনি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী বলে জানা গেছে। অপর অভিযুক্ত নেতা তাকবির আহমেদ ইমন। তিনি আইবিএ ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এ ছাড়াও রাবি শাখা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক সদস্য। তারা দুজনেই শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শফিকের অনুসারী বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী ছাত্রলীগের সাবেক দুই নেতা হলেন- মনিরুল ইসলাম জয় ও সাব্বির হোসেন। জয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ছিলেন। সাব্বির হোসেনও সামজকর্ম বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের উপক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন তিনি।
ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা জয় বলেন, গত ১৫ দিন আগে ভুক্তভোগী দুই ছাত্রলীগ নেতাকে তার বিভাগের এক ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে দেখা করতে বলেন অভিযুক্ত জাকির হোসেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘তোমরা আমার বিভাগের ছোট ভাই। তোমাদের কিছু হয়ে গেলে আমি মুখ দেখাব কী করে। আমি চাই তোমাদের কোনো ক্ষতি না হোক।’ তখন বর্তমানে করণীয় সম্পর্কে জানতে চান সাজু। তখন জাকির বলেন, ‘আমিও ছাত্রলীগকে বিভিন্ন সময়ে টাকা দিয়েছি। এখন তোমাদের কাছে টাকা দাবি করি কীভাবে? তবে হাবিব ভাই আছে, শফিক ভাই আছে। শফিক ভাই ছাত্রদলের ক্যান্ডিডেট। ভাইয়েরা টাকা চেয়েছে। টাকা না দিলে তারা যা খুশি করতে পারে।’
এসময় জাকির বলেন, ‘তোরা বিভাগের ছোট ভাই খুব বেশি টাকা দেওয়া লাগবে না তোদের। দশ করে দুজনে ২০ হাজার টাকা দিলেই হবে।’ গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত টাকা দেওয়ার সময় বেঁধে দেন তিনি। তবে সাব্বিরের পারিবারিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তিনি।
গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় ভুক্তভোগী জয়ের বন্ধু সাজুর মাধ্যমে তাদের দুজনকে আবারও বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন অক্ট্রয় মোড়ে ডাকেন জাকির। সেখানে ছাত্রদল নেতা জাকির, ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য তাকবির আহমেদ ইমনসহ আরও ১০-১২ ছাত্রদলের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সেখানে জাকির অভিযোগ তোলেন, জয় টাকা দাবির বিষয়টি বিভাগে জানিয়েছে। পরে ১০ হাজার না বরং এক লাখ টাকা দাবি করেন জাকির।
জয়ের পক্ষে লাখ টাকা দেওয়া সম্ভব না বলে জানালে ছাত্রদল নেতা ইমন তার কলার চেপে ধরেন এবং তার ফোন কেড়ে নেন। এ সময় জাকির উপস্থিত কয়েকজনকে রড আর স্ট্যাম্প রেডি করতে বলেন। বলেন, এগুলো আজ কাজে লাগবে।
এ সময় ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ১০ হাজার একশ টাকা সাজুর অ্যাকাউন্টে নিয়ে নেন তিনি। তখন জাকির বলেন, ‘আজকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে যা, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে ৪০ হাজার টাকা দিবি। নয়তো তোকে মেরে পুলিশে দেব।’
ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা মনিরুল ইসলাম জয় বলেন, ‘আমি গত ১৮ জুলাই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করি। এরপর থেকে আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম। কোনো ঝামেলায় যাতে না পড়ি এ জন্য আমি বিভাগের বড় ভাই জাকিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তবে তিনি আমাকে ভয় দেখিয়ে ১০ হাজার টাকা নিয়ে নিয়েছেন। পাশাপাশি আরও ৪০ হাজার টাকা না দিলে মারধর এবং পুলিশে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। আন্দোলনে যুক্ত থাকায় ছাত্রলীগের হেনস্থার শিকার হয়েছি। এখন যদি ছাত্রদলের কাছে হেনস্থা হই, তবে আমি যাব কোথায়?’